রাজনীতি

ভোটের দিন হরতাল-অবরোধের চিন্তা বিএনপির

প্রকাশ: ০৩ জানুয়ারী ২০২৪ ১১:৫০

আসছে ৭ জানুয়ারির নির্বাচন ভোটারবিহীন প্রমাণ করতে সেদিনও কর্মসূচি থাকবে বিএনপি, জামায়াতসহ সমমনা দলগুলোর।ভোটের দিন হরতাল, অবরোধের মতো কর্মসূচি দেওয়ার কথা ভাবছেন দলগুলোর শীর্ষ নেতারা। নেতারা বলছেন, নির্বাচনের দিন তারা এমন কোনো কর্মসূচি দেবেন না, যাতে আওয়ামী লীগের নিজ দলের প্রার্থীরা নিজেরা নিজেরা সংঘর্ষে জড়িয়ে কোনো ঘটনা ঘটিয়ে তার দায় বিরোধীদের ওপর চাপাতে পারে।

সংঘর্ষ এড়ানোর বিষয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্য বিরোধীদের আরও সতর্ক করে দিয়েছে বলে বিএনপি ও সমমনা দলের নেতারা জানান।কয়েক দিন আগে ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘নির্বাচনকে কেন্দ্র করে গুপ্ত হত্যা চালাতে পারে বিএনপি।’

বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর একাধিক শীর্ষ নেতা দেশ রূপান্তরকে বলেন, আগামীকাল বৃহস্পতিবার তাদের তিন দিনব্যাপী লিফলেট বিতরণ কর্মসূচি শেষ হবে। এরপর কী ধরনের কর্মসূচি দেওয়া যায় তা নিয়ে বিএনপি দলীয় ফোরামের পাশাপাশি সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে। প্রাথমিক সিদ্ধান্ত অনুযায়ী নির্বাচনের দিন হরতাল কিংবা অবরোধের কর্মসূচি ঘোষণার কথা রয়েছে। তারা বলছেন, নির্বাচনের দিনই আন্দোলন শেষ হয়ে যাবে না। আন্দোলন চলমান থাকবে।

সরকারের পদত্যাগ ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে এক দফার আন্দোলনে থাকা বিএনপি ও সমমনা দলগুলো দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন বর্জন করেছে। গত ২৮ অক্টোবর বিএনপির মহাসমাবেশ ঘিরে সংঘাতের পর হরতাল-অবরোধের মতো কর্মসূচি পালন করে বিরোধীরা। তবে সেই কর্মসূচি থেকে পিছিয়ে ভোট বর্জন ও অসহযোগের ডাক দেয় তারা। জনগণকে ভোট বর্জনের আহ্বান  প্রচার কর্মসূচি পালন করছে বিএনপি ও সমমনা দলগুলো।

এই কর্মসূচির অংশ হিসেবে ১ জানুয়ারি থেকে বিরোধী দলগুলোর সমর্থক আইনজীবীরা আদালত বর্জন কর্মসূচি পালন করে আসছেন। ৭ জানুয়ারি নির্বাচনের দিন পর্যন্ত কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার কথা তাদের।বিএনপি দলীয় সূত্রে জানা গেছে, আন্দোলনকে গুরুত্ব দিয়ে ঢাকার সাংগঠনিক প্রস্তুতি, দলের পাশাপাশি অঙ্গসংগঠনের নেতকর্মীদের আবার মাঠে নামানো এবং সমন্বয় বাড়ানোর ওপর জোর দেওয়া হচ্ছে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য বেগম সেলিমা রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘৭ জানুয়ারি শুধু লোক দেখানোর নির্বাচন হতে যাচ্ছে। নির্বাচনের দিন কী কর্মসূচি দেওয়া যায় তা নিয়ে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের পাশাপাশি রাজপথে শরিক দলগুলোর শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রাখছেন, আলোচনা করছেন। ৪ জানুয়ারি নতুন কর্মসূচির ঘোষণা আসবে।’

বিএনপির একাধিক নেতা জানান, নির্বাচনের দিন জনগণ যাতে ভোটকেন্দ্রে না যায়, ভোট বর্জন করে, সেটা ফলপ্রসূ করার জন্য বিএনপি ও সমমনা দলগুলো লিফলেট বিতরণ করছে। জনমত গঠন করছে। এ ছাড়া যেহেতু নির্বাচনের দিন কৌশলগত কারণে সভা-সমাবেশের কর্মসূচি দেওয়া যাবে না, তাই হরতাল, অবরোধের মতো কর্মসূচির কথা নিয়ে আলোচনা হচ্ছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির এক ভাইস চেয়ারম্যান বলেন, ‘আমাদের চলমান আন্দোলন কর্মসূচি বহুমুখী। রাজপথের আন্দোলন-সংগ্রামের পাশাপাশি চলছে কূটনৈতিক তৎপরতাও।’ এই নেতা জানান, ‘একতরফা’ নির্বাচনসহ বিরোধী দলের ওপর সর্বোচ্চ নির্যাতন, ‘ফরমায়েশি’ রায় ছাড়াও চলমান পরিস্থিতি উল্লেখ করে সম্প্রতি ঢাকার বিদেশি দূতাবাস ও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থাকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া গত রবিবার জাতিসংঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ ঢাকার বিভিন্ন দূতাবাসে চিঠি দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত ও হাইকমিশনারদের সঙ্গে বৈঠক করছেন দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা।

১২-দলীয় জোটের মুখপাত্র ও বাংলাদেশ লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (বিএলডিপি) মহাসচিব শাহাদাত হোসেন সেলিম লেন, ‘আমরা জনগণের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেছি, ৭ তারিখ আপনার একটি সঠিক সিদ্ধান্তে দেশ ও জাতি এই ফ্যাসিস্ট সরকারের হাত থেকে মুক্তি পাবে। আপনারা ভোটকেন্দ্রে যাবেন না। ভোট বর্জন করুন। ৭ তারিখ সারা দিন পরিবারকে সময় দিন।’

৭ জানুয়ারির নির্বাচন ঘিরে রাজনৈতিক অঙ্গনে নানা গুঞ্জন রয়েছে। গত শনিবার আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘বিএনপি সরকার পতনের যে আন্দোলন শুরু করেছিল, এই আন্দোলনে, স্বাভাবিক আন্দোলনে ব্যর্থ হয়ে তারা নাশকতার দিকে গেছে। এমনও আমরা খবর পাচ্ছি, লন্ডন থেকে বার্তা দেওয়া হয়েছে, প্রয়োজনে গুপ্ত হত্যার পথে তারা যাবে। হয়তো দেখা যাবে, কোনো গুরুত্বপূর্ণ নেতা বা প্রার্থীকে মেরে ফেলা, লাশ বানানোর চক্রান্ত তাদের আছে এই নির্বাচনকে কেন্দ্র করে।’

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের এমন বক্তব্যের জবাবে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান বলেন, ‘আমরা নির্বাচন প্রতিহত করব তা কখনো বলিনি। জনগণকে সে আহ্বান জানাইনি। আমরা বলছি, এটা কোনো নির্বাচন নয়, এটা নির্বাচনের তামাশা। আমরা এই নির্বাচনকে পরিহার করছি। পাশাপাশি সাধারণ জনগণের প্রতি আহ্বান জানিয়েছি নির্বাচন বর্জন করার জন্য।’

তিনি বলেন, ‘আমাদের শান্তিপূর্ণ, গণতান্ত্রিক এবং নিয়মতান্ত্রিক কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে। যতক্ষণ না দাবি আদায় হচ্ছে, ততক্ষণ আন্দোলন চলবে।’নির্বাচনের দিনের কর্মসূচি সম্পর্কে জানতে চাইলে লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) চেয়ারম্যান কর্নেল (অব.) অলি আহমদ বলেন, ‘আমরা নির্বাচন প্রতিহত করতে যাব না। সরকার একতরফা নির্বাচন করলে দেশ ও জাতি যে সংকটের মুখে পড়বে, আমরা তা জনগণের সামনে তুলে ধরছি।’

তিনি বলেন, ‘খোদ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, মার্চে দেশে দুর্ভিক্ষ হতে পারে। নির্বাচন কমিশনার আনিছুর রহমান বলেছেন, অবাধ, গ্রহণযোগ্য ও সুষ্ঠু নির্বাচন কোনো কারণে যদি না করতে পারি, তাহলে আমাদের রাষ্ট্র নিজেই ব্যর্থ রাষ্ট্র হয়ে যাবে। আমরা সমগ্র বিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাব।’

জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা আবদুল হালিম  বলেন, ‘ইতিপূর্বে আমরা হরতাল, অবরোধ কর্মসূচি পালন করেছি। বর্তমানে নির্বাচন বর্জনের আহ্বান জানিয়ে জনগণের মাঝে লিফলেট বিতরণ করছি। নির্বাচনের বিপক্ষে জনমত গঠন করছি। নতুন কর্মসূচি নিয়ে আলোচনা চলছে। বিরোধী সব রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতারা আলোচনা করে কর্মসূচি চূড়ান্ত করা হবে।’

তবে ৭ জানুয়ারি নির্বাচনের দিন হরতাল, অবরোধের মতো কর্মসূচি আসতে পারে বলে তিনি জানান।

এর আগে গত বুধবার সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি ভবনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের মহাসচিব ব্যারিস্টার কায়সার কামাল জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে সুপ্রিম কোর্টসহ দেশের সব আদালত বর্জনের ঘোষণা দিয়েছেন।

রাজনীতি থেকে আরো পড়ুন