সিলেট

ফিরে দেখা-২০২৩

সিলেট বিভাগে হত্যাকান্ডের শিকার ২৩ নারী

প্রকাশ: ০৩ জানুয়ারী ২০২৪ ১৩:১১

প্রতিকী ছবি

বিদায়ী ২০২৩ সালে সিলেট বিভাগে ২৩ নারী হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছেন। এর মধ্যে নারীর আপন ভুবন খোদ স্বামীর হাতেই খুন হয়েছেন ১০ নারী। এর আগের বছর ২৮ নারী হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছিলেন। আর ২০২১ সালে খুন হন ১০ নারী। সংবাদপত্রে প্রকাশিত সংবাদ পর্যালোচনা করে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।

নারীর প্রতি সহিংসতার ঘটনা গভীর উদ্বেগজনক বলে মনে করেন জেন্ডার বিষয়ক গবেষক সহকারী অধ্যাপক আফরোজা সোমা। তিনি বলেন, নারীর সংখ্যা ও গড় আয়ু আগের তুলনায় যেমন বেড়েছে, তেমনি বেড়ে গেছে হত্যাকান্ডও। কম সময়ে নারী হত্যার সুবিচার নিশ্চিত করা গেলে নারীর প্রতি সহিংসতা কমে আসবে। বিচারের দীর্ঘসূত্রতায় অপরাধ প্রবণতা বেড়ে যায়। আবার অনেক ক্ষেত্রে আইনের ফাঁক গলিয়ে আসামিরা পার পেয়ে যায়। এক্ষেত্রে সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরসমূহের কঠোর নজরদারি প্রয়োজন।

সিলেটের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের স্পেশাল পিপি এডভোকেট রাশিদা সাঈদা খানমের মতে, পারিবারিক কলহের কারণেই বেশিরভাগ নারীনির্যাতনের ঘটনা ঘটছে। এছাড়াও অভাব অনটন, আর্থিক সংকটের কারণেও নারীকে হত্যা করা হচ্ছে। গর্ভধারিণী মাকে তার পুত্রের হাতে নেশার টাকার জন্যে খুন হওয়ার ঘটনাও ঘটছে। নারী হত্যা বা নারী নির্যাতন প্রতিরোধ করতে হলে ব্যাপকভাবে সচেতনতামূলক কর্মসূচি বাস্তবায়ন করতে হবে।

আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশের (আইসিডিডিআরবি) লিঙ্গীয় পরিচয় (জেন্ডার) এবং নারীর প্রতি সহিংসতা সম্পর্কে পুরুষের মনোভাব ও চর্চাবিষয়ক এক গবেষণায় বলা হয়, গ্রামের ৮৯ শতাংশ পুরুষ মনে করেন, স্ত্রী অন্যায় কিছু করলে স্বামীর মার দেওয়ার অধিকার আছে। এ ক্ষেত্রে পিছিয়ে নেই শহরের পুরুষেরাও, তাদের ক্ষেত্রে এ হার ৮৩ শতাংশ। এ ছাড়া শহরের ৯৩ শতাংশ এবং গ্রামের ৯৮ শতাংশ পুরুষই বিশ্বাস করেন, পুরুষ হতে হলে তাকে কঠোর হতেই হবে। আবার শহরের ৫০ শতাংশ এবং গ্রামের ৬৫ শতাংশ পুরুষ বিশ্বাস করেন, পরিবারকে রক্ষা করার জন্য নারীদের নির্যাতন সহ্য করা উচিত। ২ হাজার ৪০০ জন পুরুষের সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে এই জরিপ চালানো হয়।

আর বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) ‘ভায়োলেন্স অ্যাগেইনস্ট উইমেন সার্ভে ২০১৫’ শীর্ষক এক জরিপের ফলাফলে বলা হয়েছে, বিবাহিত নারীদের ৮০ শতাংশই জীবনে অন্তত একবার স্বামীর হাতে কোনো-না-কোনোভাবে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। অন্যদিকে স্বামীর নির্যাতনের শিকার হওয়ার পর বেশির ভাগ নারী (৭২ দশমিক ৭ শতাংশ) কখনোই নির্যাতনের কথা কাউকে জানাননি।

ফিরে দেখা নারী হত্যাকান্ড

২০২৩ সালের ১৮ জানুয়ারি সুনামগঞ্জ পৌর এলাকার হাজীপাড়ায় গর্ভধারিণী মা আছিয়া বেগম তার প্রতিবন্ধী কন্যা ফারজানা আক্তারকে (২২) দা দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করেন।

মৌলভীবাজারে ১০ ফেব্রুয়ারি অজ্ঞাত নারীর গলিত মরদেহ উদ্ধার করা হয়। সিলেট নগরের শেখঘাটে ১২ ফেব্রুয়ারি সকাল বেলায় নিজের বাসায় খুন হন টিকটকার তরুণী সোনিয়া আক্তার (২৩)।

হবিগঞ্জ জেলা সদরের একটি আবাসিক হোটেলে ১৮ মার্চ স্বামীর হাতে গৃহবধূ ফরিদা বেগম (৪৪) খুন হন। চুনারুঘাটের গাদিশালায় ২৩ মার্চ গৃহবধূ জেসমিন আক্তারকে (৩৫) স্বামী সূর্যল হক কুপিয়ে হত্যা করে। কোম্পানীগঞ্জে বিয়ের মাত্র ৩ মাসের মাথায় ২৫ মার্চ গৃহবধূ হাফছা বেগমকে (১৯) স্বামী গলা টিপে হত্যা করে। রাজনগরে হাঁসের ধান খাওয়াকে কেন্দ্র করে ৬ এপ্রিল প্রতিপক্ষের হামলায় বৃদ্ধা আখলিবুন বেগম (৬০) খুন হন।

বিয়ানীবাজারের পূর্বখলা গ্রামে ১২ এপ্রিল ভাসুরের হাতে খুন হন গৃহবধূ স্বপ্নারা বেগম। মাধবপুরের রাজাপুরে ২৪ এপ্রিল পুত্রের মার্বেল খেলার বিরোধে খুন হন গৃহবধূ মিনারা বেগম (৪৭)। বানিয়াচং এর চানপুরে ২৬ এপ্রিল নরাধম পুত্র রিপন মিয়া তার গর্ভধারিণী মা রাবেয়া খাতুনকে (৫৪) হত্যা করে। চুনারুঘাটের কমলাপুরে ৯ জুলাই স্বামীর হাতে গৃহবধূ জ্যোৎস্না আক্তার (২২) খুন হন। ১২ জুলাই বিয়ানীবাজারে খুন হন গৃহবধূ ফাহমিদা আক্তার (২৪)। সিলেট নগরের মেজরটিলায় ২১ জুলাই স্বামী বিশ্বজিৎ স্ত্রী সিমলা রাণী নাথকে (২১) ছুরিকাঘাত করে হত্যা করে। কুলাউড়ায় ২৫ জুলাই টয়লেট থেকে অজ্ঞাত যুবতীর মরদেহ উদ্ধার করা হয়।

কোম্পানীগঞ্জের দয়ারবাজার এলাকার বালুচরে নিজের বসতঘর থেকে গৃহবধূ ছালেখা বেগমের (৫২) রক্তাক্ত মরদেহ উদ্ধার করা হয়। গোয়াইনঘাটের উত্তর প্রতাপপুরে ৩ আগস্ট আয়শা সিদ্দিকা জুলি ওরফে জরিনা (৩০) প্রতিবেশী যুবকের হাতে খুন হন। চুনারুঘাটে ৮ আগস্ট গৃহবধূ শাপলা আক্তারকে (৩০) মুখে বিষ ঢেলে হত্যা করে তার স্বামী। গোয়াইনঘাটে ২৪ আগস্ট ৩ মাসের অন্তঃসত্ত্বা গৃহবধূ রিপা বেগম (২৩) স্বামীর হাতে খুন হন।

চুনারুঘাটে ২৬ আগস্ট স্বামীর দায়ের কুপে হাত-পা বিচ্ছিন্ন হওয়া গৃহবধূ আকলিমা বেগম (৩৫) খুন হন। মাধবপুরে ১৬ সেপ্টেম্বর স্বামীর হাতে খুন হন স্ত্রী সঞ্চিতা সাঁওতাল। সিলেট নগরের ছড়ারপাড়ের বৌবাজারে দেবরের হাতে খুন হন গৃহবধূ জেসমিন আক্তার (২২)।

বিশম্ভরপুরের বাঘমারা মুজিব পল্লীতে গৃহবধূ নাজিরা আক্তারকে (২৭) তার স্বামী কুপিয়ে হত্যা করে। বাহুবলের কামাইছড়া চা বাগানে অজ্ঞাত নারীর আগুনে পোড়া মরদেহ উদ্ধার করা হয়। ধারণা করা হয়, আগুনে পুড়িয়ে ওই নারীকে হত্যা করা হয়েছে।

সিলেট থেকে আরো পড়ুন