ধারালো অস্ত্রের কুপে বিচ্ছিন্ন কপাল। অস্ত্রের আঘাতে উপড়ে গেছে এক চোখ। আরেকটি চোখও জখমে নষ্ট হয়ে গেছে। কেবল প্রাণ বায়ু বেরিয়ে যাওয়ার উপক্রম। জখমের ক্ষতচিহ্ন দেখলে সুস্থ মানুষও জ্ঞান হারাবে।
এমন বর্বরোচিত হামলা হয়েছে বালাগঞ্জ উপজেলার পশ্চিম গৌরিপুর ইউনিয়নের খুজকিপুর গ্রামের মৃত আব্দুর রাজ্জাকের ছেলে আব্দুল হামিদের উপর।নৃশংসতার চিত্র যেনো জাহেলিয়াতের যুগকেও হার মানায়। এলাকার লোকজনও বলেন, মানুষ হয়ে মানুষকে এমন নৃশংসভাবে হত্যা চেষ্টা করতে পারে, তা আগে দেখিনি।
এতেও ক্ষান্ত হয়নি হামলাকারীরা। হামিদকে রক্ষায় তার সহোদর জাকির ও আত্মীয় জুনেদ এগিয়ে গেলে তাদেরও কুপিয়ে গুরুতর জখম করা হয়। স্বামীর রক্তাক্ত দেহের পাশে যাওয়া স্ত্রীকে লাঞ্ছিত করা হয় এবং অবুধ শিশুদের আছাড় মেরে ফেলা হয় রাস্তার ধারে।
বর্বরোচিত এমন হামলার ঘটনা ঘটে গত ৩০ এপ্রিল বালাগঞ্জ উপজেলার পশ্চিম গৌরিপুর ইউনিয়নের খুজকিপুর গ্রামে।সন্ত্রাসীদের ধারালো অস্ত্রের কুপে মস্তকে গভীরতম ক্ষত নিয়ে ঢাকার একটি হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন আব্দুল হামিদ। তাকে মৃত্যু দুয়ারে পাঠিয়ে প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে হামলাকারীরা।
জানা গেছে, পূর্ব শত্রুতার জের ধরে একই গ্রামের মৃত আব্দুল বারিক খাজুরের ছেলে আসুক মিয়ার নেতৃত্বে সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা আব্দুল হামিদের উপর অতর্কিত হামলা চালায়। হামলাকারীরা তাকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কপাল আঘাত করলে দু’ভাগ হয়ে যায়। ধারালো অস্ত্রের আঘাতে তার একটি চোখ উপড়ে যায় এবং আরেকটি চোখ গলে যায়।
তার আর্তচিৎকারে স্বজনরা এগিয়ে গেলে সন্ত্রাসীরা আব্দুল হামিদের ভাই জাকির ও আত্মীয় জুনেদকে কুপিয়ে গুরুতর জখম করে। সন্ত্রাসীরা আব্দুল হামিদের স্ত্রী ও সন্তানদের টানা চেড়া করে মাটিতে ফেলে বেদম মারপিট করে।
আশংকাজনক অবস্থায় আব্দুল হামিদ, জাকির ও জুনেদকে সিলেট ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। আব্দুল হামিদের অবস্থার অবনতি হলে তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় প্রেরণ করা হয়। বর্তমানে ঢাকার একটি হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন তিনি। অস্ত্রের আঘাতে তার দুটি চোখ একেবারে নষ্ট হয়ে গেছে। তিনি প্রাণে বেঁচে ফিরলেও দৃষ্টিহীন অবস্থায় বেঁচে থাকতে হবে, জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।
এ ঘটনায় আব্দুল হামিদের ভাই আব্দুর রকিব বাদী হয়ে ৮ জনকে এজাহারভুক্ত আসামী করে অজ্ঞাত আরও ১১ জনের বিরুদ্ধে বালাগঞ্জ থানায় মামলা (নং-০১(৫)২২)দায়ের করেন।
মামলার এজাহার নামীয় আসামীরা হলেন- বালাগঞ্জ উপজেলার পশ্চিম গৌরিপুর ইউনিয়নের খুজকিপুর গ্রামের মৃত আব্দুল বারিক খাজুরের ছেলে আসুক মিয়া, জামাল মিয়াম, হায়দর রাজা এমরান, একই গ্রামের মৃত আব্দুল মান্নানের ছেলে আব্দুস সত্তার লেবু, আব্দুল কুদ্দুস এহিয়া, নুনু মিয়ার ছেলে নিরু মিয়া, মৃত রূপা মিয়ার ছেলে সুজন মিয়া, মৃত পঙ্কী মিয়ার ছেলে আব্দুল্লাহ আল মামুন।
মামলা দায়েরের পর সন্ত্রাসী আসুক ও তার সহযোগীরা প্রকাশ্যে ঘুরাফেরা করলেও গ্রেফতার করছে না পুলিশ।
আসামীরা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে এবং আহতদের স্বজনদের হত্যা অপহরণ ও গুম করার প্রকাশ্যে হুমকি দিচ্ছে।
এদিকে, আসামিরা গ্রেফতার না হওয়াতে মামলা করে নিরাপত্তাহীনতায় ভোগছেন স্বজনরা। আব্দুল হামিদের স্ত্রী তিন অবুঝ সন্তান নিয়ে চরম আতঙ্কের মধ্যে বসবাস করছেন। শিশুদের স্কুল-মাদ্রাসায় যাতায়াতও বন্ধ রয়েছে। এমনকি তার স্বজনদেরও হুমকি দেওয়া হচ্ছে।
আসামীরা গ্রামে সশস্ত্র মহড়া দিতে থাকায় গ্রামের লোকজন মসজিদে যাতায়াত করতে পারছেন না। অবিলম্বে সন্ত্রাসী আসুক ও তার সহযোগীদের গ্রেফতারে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ চেয়েছেন আহতদের স্বজনরা।
বালাগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ রমা প্রসাদ চক্রবর্তী জানান- ঘটনার পর থেকে মামলার মূল আসামীরা আত্মগোপনে রয়েছে। যে কারণে তাদের গ্রেফতার করা সম্ভব হচ্ছে না। পুলিশ অভিযান অব্যাহত রেখেছে।
সম্পাদক: এসএম নাসির উদ্দিন।
উপ সম্পাদক: দেওয়ান জাকির হোসেন।
যোগাযোগ: পশ্চিম জিন্দাবাজার, সিলেট।
ই-মেইল: natunsylhetnews@gmail.com
মুঠোফোন: ০১৭১৫৫০১১৫১
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা বা ছবি অনুমতি ছাড়া নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা সম্পুর্ন বে-আইনি।